সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বিবিধ

রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

শ্রীশ্রীসরস্বতী পূজাপদ্ধতি



শ্রীশ্রীসরস্বতী পূজাপদ্ধতি

উপবেশন ও আসন- সকালে স্নান-আহ্নিক সেরে ইষ্টমন্ত্র জপ বা স্তব পাঠ করতে করতে পূজাস্থলে গিয়ে শুদ্ধাসনে পূর্বমুখে বা উত্তরমুখে বসবেন।


আচমন- গোকর্ণাকৃতি ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলের গোড়ায় মাষকলাই ডুবতে পারে এমন পরিমাণ জল নিয়ে ‘ওঁ বিষ্ণু’ মন্ত্রে তিনবার পান করে ডান অঙ্গুষ্ঠের মূল দেশ দিয়ে মিলিত ঠোঁটদুটি ডান থেকে বামে দু’বার মার্জনা করবে ও হাত ধুয়ে ফেলবে।
এবারে তর্জনী, মধ্যমা ও অনামিকার মিলিত অগ্রভাগ দ্বারা ওষ্ঠ ও অধর স্পর্শ করবে। এভাবে অঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনীর মিলিত অগ্রভাগ দিয়ে ডান ও বাম নাসাপুট, অঙ্গুষ্ঠ ও অনামিকার মিলিত অগ্রভাগ দিয়ে প্রথমে ডান ও পরে বাম চোখ, তারপরে ডান ও বাম কান ছোঁবে। এরপরে অঙ্গুষ্ঠ ও কনিষ্ঠার অগ্রভাগ দিয়ে নাভি স্পর্শ করবে ও হাত ধুয়ে ফেলবে।
অতঃপর করতল দিয়ে হৃদয়, সমস্ত আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে মাথা এবং ডান ও বাম বাহুমূল স্পর্শ করবে ও হাত ধুয়ে হাত জোড় করে পাঠ করবেঃ
ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ
দিবীব চক্ষুরাততম্।
ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোহপি বা
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।

 গন্ধাদির অর্চনা- ‘ওঁ এতেভ্যো গন্ধাদিভ্যো নমঃ’ -মন্ত্রে পুষ্পপাত্রে সাজানো গন্ধ ও পুষ্পাদিতে  জলের দ্বারা তিনবার প্রোক্ষণ ( চিৎ হাতে জলের ছিটা ) করবে। পরে গন্ধপুষ্প নিয়ে ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতেভ্যো গন্ধাদিভ্যো নমঃ’ বলে পুষ্পপাত্রে দিবে এবং হাতে এক একটি গন্ধপুষ্প নিয়ে নিচের এক একটি মন্ত্র বলে বলে গন্ধপুষ্প তাম্রকুণ্ডে দিয়ে দিয়ে পূজা করবে।
 ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় শ্রীবিষ্ণবে নমঃ’;
 ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতৎসম্প্রদানেভ্যঃ পূজনীয়দেবতাভ্যো নমঃ’;
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে শ্রীগুরবে নমঃ’;
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে গণেশাদিপঞ্চদেবতাভ্যো নমঃ’;
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে নমো নারায়ণায় নমঃ’;
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ব্রাহ্মণেভ্যো নমঃ’।

সূর্যার্ঘ্য-  কুশীতে জল, রক্তপুষ্প, রক্তচন্দন, আতপ চাল, যব, তিল, সরিষা, কুশের অগ্র ও দুর্বা নিয়ে নিম্নোক্ত মন্ত্রে নিবেদন করবেঃ
‘ওঁ নমো বিবস্বতে ব্রহ্মন্  ভাস্বতে বিষ্ণুতেজসে।
জগৎসবিত্রে শুচয়ে সবিত্রে কর্মদায়িনে।
এষোহর্ঘ্যঃ শ্রীসূর্যায় নমঃ’- মন্ত্রে সন্মুখস্থ বাণেশ্বরাদি যন্ত্রের উপর দিবে ও নিচের মন্ত্রে প্রণাম করবে-
ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্ ।
ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।
[ জ্ঞাতব্যঃ রক্তপুষ্প, রক্তচন্দন, আতপ চাল, যব, তিল, সরিষা, কুশের অগ্র ও দুর্বা সকল দেবতা বিষয়ক অর্ঘ্যেই প্রদান করা যায়। অন্যান্য দ্রব্যের অভাব হলে শুধু আতপ চাল ও দুর্বা দ্বারা প্রদান করা যায়। ]

স্বস্তিবাচন- ‘ওঁ কর্তব্যেহস্মিন্ লক্ষ্ম্যাদি দেবতা সহিত সরস্বতীপূজাকর্মণি ওঁ পুণ্যাহং ভবন্তো ব্রুবন্তু’। পরে ‘ওঁ পুণ্যাহং’ তিনবার বলতে বলতে ঘণ্টাবাদনপূর্বক আতপ চাল ছড়াবে।
‘ওঁ কর্তব্যেহস্মিন্ লক্ষ্ম্যাদি দেবতা সহিত সরস্বতীপূজাকর্মণি ওঁ স্বস্তি ভবন্তো ব্রুবন্তু’। পরে ‘ওঁ স্বস্তি’ তিনবার বলতে বলতে ঘণ্টাবাদনপূর্বক আতপ চাল ছড়াবে।
‘ওঁ কর্তব্যেহস্মিন্ লক্ষ্ম্যাদি দেবতা সহিত সরস্বতীপূজাকর্মণি ওঁ ঋদ্ধিং ভবন্তো ব্রুবন্তু’। পরে ‘ওঁ ঋদ্ধ্যতাম্’ তিনবার বলতে বলতে ঘণ্টাবাদনপূর্বক আতপ চাল ছড়াবে। পরে নিম্নোক্ত মন্ত্রপাঠ ও ঘণ্টাবাদনসহ আতপ চাল ছড়াবেঃ
ওঁ স্বস্তি ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ ।
স্বস্তি নস্তার্ক্ষো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতির্দধাতু।
ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি।
তারপর করজোড়ে পাঠ করবে-
ওঁ সূর্যঃ সোমো যমঃ কালঃ সন্ধ্যে ভূতান্যহঃ ক্ষপা।
পবনো দিকপতির্ভূমিরাকাশং খচরামরাঃ।
ব্রাহ্ম্যং শাসনমাস্থায় কল্পধ্বমিহ সন্নিধিম্।
ওঁ তৎসৎ অয়মারম্ভঃ শুভায় ভবতু।

সঙ্কল্প- তাম্রপাত্রে ( কুশীতে ) মূল ও অগ্রভাগের সহিত তিনটি কুশ, তিল, তুলসী,  হরিতকী, গন্ধ, পুষ্প, আতপ চাল ও জল নিয়ে বীরাসনে (দক্ষিণ জানু পেতে ) পূর্বমুখী ( বা উত্তরমুখী ) বসবে। বাম করতলে কুশী স্থাপন করে দক্ষিণ  করতল দ্বারা আচ্ছাদনপূর্বক পাঠ করবেঃ
বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য মাঘে মাসি মকর রাশিস্থে ভাস্করে শুক্লে পক্ষে পঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্মা ( পরার্থে- অমুকগোত্রস্য অমুকদেবশর্মণঃ ) [অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকঃ
(যজমানের গোত্র ও নাম)] সরস্বতী প্রীতিকামনায়া গণপত্যাদি নানাদেবতাপূজাপূর্বক-লক্ষ্মী-মস্যাধার-লেখনী-সহিত সরস্বতী পূজাকর্ম অহং করিষ্যে ( পরার্থে- করিষ্যামি )।
পরে হাতের পাত্রটি ঈশান কোণে উপুড় করে রেখে তার উপর নিম্নোক্ত মন্ত্রে আতপ চাল ছড়াবে এবং ঘণ্টা বাজাবে-
ওঁ যজ্জাগ্রতো দূরমুদৈতি দৈবং তদু সুপ্তস্য তথৈবৈতি।
দূরঙ্গমং জ্যোতিষাং জ্যোতিরেকং তন্মে মনঃ শিবসঙ্কল্পমস্তু।
অতঃপর করজোড়ে পাঠ করবে-
ওঁ সঙ্কল্পিতার্থাঃ সিধ্যন্তু সিদ্ধাঃ সন্তু মনোরথাঃ।
ভক্তিজ্ঞানোদয়ায় অয়মারম্ভঃ শুভায় ভবতু।
হরিঃ ওঁ তৎসৎ।
ঘটস্থাপন- অতঃপর নিম্নোক্ত রীতিতে সংক্ষেপে ঘটস্থাপন করা যেতে পারে। ভূমিতে সর্বতোভদ্রমণ্ডল অথবা ভূপুরমধ্যগত অষ্টদল পদ্ম এঁকে অঞ্জলি পরিমান শুক্ল্যধান্যের ওপর ঘট বসাবে। ঘট মধ্যে জল, সোনা ও ঘটোপরি আম্রপল্লব বসিয়ে তদুপরি একটি সশীষ ডাব অথবা কলা বা হরীতকী স্থাপন করবে। সম্ভব হলে ফলটি বস্ত্রখণ্ডে আচ্ছাদিত করে তদুপরি একটি অর্ঘ্য (বিল্বপত্র, গন্ধপুষ্প, দুর্বা ও আতপ চাল) সাজিয়ে দিবে। ঘটগাত্রে সিন্দুর দিয়ে একটি স্বস্তিক বা পুত্তলিকা অঙ্কন করবে। অনন্তর করজোড়ে পাঠ করবে-
ওঁ সর্বতীর্থোদ্ভবং বারি সর্বদেবসমন্বিতম।
ইমং ঘটং সমারুহ্য তিষ্ঠ দেবি গণৈঃ সহ।
ঘটস্পর্শ করে পাঠ করবে- ওঁ স্থাং স্থীং স্থিরো ভব। বৈদিক গায়ত্রী- ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ।। -এই মন্ত্রও ঘট স্পর্শ করে তিনবার পাঠ করবে।

সামান্যার্ঘ্যস্থাপন- নিজের সামনে একটু বামদিকের ভূমিতে অধোমুখ ত্রিকোণ (পুং দেবতা হলে উর্ধমুখ), বৃত্ত ও চতুর্ভুজ মণ্ডল এঁকে তদুপরি পূজা করবে-
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে আধারশক্তাদিভ্যো নমঃ।
পরে ‘ফট্’ মন্ত্রে কোশা ধুয়ে মণ্ডলোপরি স্থাপন করে ‘নমঃ’ মন্ত্রে জলপূর্ণ করবে এবং ‘ওঁ’ মন্ত্রে কোশার অগ্রভাগে একটি অর্ঘ্য (বিল্বপত্র, গন্ধপুষ্প, দুর্বা ও আতপ চাল) সাজিয়ে দিবে। ‘ওঁ’ মন্ত্রে দূর্বা, অক্ষত বিল্বপত্র, চন্দন, পুষ্প, তুলসীপত্র, আতপ চাল কোশার জলে নিক্ষেপ করবে। পরে অঙ্কুশ মুদ্রায় জল স্পর্শ করে নিম্নোক্ত মন্ত্রে সূর্যমণ্ডল হতে তীর্থ আবাহন করবে-
ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি।
নর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু।।
অতঃপর ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে তীর্থেভ্যো নমঃ’ মন্ত্রে জলে তীর্থপূজা করে ‘হূঁ’ মন্ত্রে অবগুণ্ঠন মুদ্রা ‘বং’ মন্ত্রে ধেনুমুদ্রা প্রদর্শনপূর্বক মৎস্যমুদ্রায় জল আচ্ছাদন করে ১০ বার ‘ওঁ’ মন্ত্র জপ করবে। এরপর সামান্যার্ঘ্যের জল নিজের মাথায় ও দ্বারদেশে ছিটিয়ে দিয়ে দ্বারদেবতার পূজা করবে।
দ্বারদেবতাপূজা- ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে দ্বারদেবতাভ্যো নমঃ (নৈঋতকোণে); তাম্রকুণ্ডে- ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ব্রহ্মণে নমঃ; ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বাস্তুপুরুষায় নমঃ।
ভূতাপসারণ- ‘ফট্’ মন্ত্র আতপ চালে সাতবার জপ করে তা ঘন্টাবাদন করতে করতে নিম্নোক্ত মন্ত্রে নারাচ মুদ্রায় চারদিকে ছড়াবে-
ওঁ সর্ববিঘ্নানুৎসারয় হূঁ ফট্ স্বাহা।
ওঁ অপসর্পন্তু তে ভূতা যে ভূতা ভুবি সংস্থিতাঃ।
যে ভূতা বিঘ্নকর্তারস্তে নশ্যন্তু শিবাজ্ঞয়া।।

ভূমিশুদ্ধি- ‘ওঁ রক্ষ রক্ষ হূঁ ফট্ স্বাহা’-মন্ত্রে মুষ্টি-নিঃসৃত জল ভূমিতে নিক্ষেপ করবে।

আসনশুদ্ধি- স্ববামে আসনের নিম্নবর্তী ভূমিতে ত্রিকোণ মণ্ডল এঁকে ‘ওঁ হ্রীঁ এতে গন্ধপুষ্পে আধারশক্ত্যাদিভ্যো নমঃ’ –মন্ত্রে মণ্ডল পূজা করবে। অতঃপর আসন স্পর্শ করে পাঠ করবে- ‘ওঁ অস্য আসনোপবেশনমন্ত্রস্য মেরুপৃষ্ঠ ঋষিঃ সুতলং ছন্দঃ কূর্মো দেবতা আসনোপবেশনে বিনিয়োগঃ’। পরে কৃতাঞ্জলিপূর্বক পাঠ-
ওঁ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকা দেবি ত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা।
ত্বঞ্চ ধারয় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরু চাসনম্ ।।
অতঃপর আসনের উপর ত্রিকোণ মণ্ডল এঁকে ‘হ্রীঁ এতে গন্ধপুষ্পে আধারশক্তয়ে কমলাসনায় নমঃ’- মন্ত্রে ঐ মণ্ডল গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করবে।

গুরুপ্রণাম- হাত জোড় করে প্রণাম করবে। বামকর্ণোর্ধ্বে- ঐঁ গুরুভ্যো নমঃ; তদূর্ধ্বে- ঐঁ পরমগুরুভ্যো নমঃ; তদূর্ধ্বে- ঐঁ পরাপরগুরুভ্যো নমঃ; তদূর্ধ্বে- ঐঁ পরমেষ্ঠিগুরুভ্যো নমঃ; দক্ষিণকর্ণোর্ধ্বে- ওঁ গণেশায় নমঃ; মধ্যে অর্থাৎ ললাটে বা হৃদয়ে- ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ।
করশুদ্ধি- ‘হেঁসৌঃ’ মন্ত্রে একটি সচন্দন রক্তবর্ণ পুষ্প নিয়ে ‘আং হূং ফট্ স্বাহা’ মন্ত্রে উভয় করতল দিয়ে মর্দন করে বাম হাতের নারাচ মুদ্রায় সেই ফুলটিকে মাথার চারদিকে ‘ক্লীং’ মন্ত্রে ঘুরিয়ে ‘ঐং’ মন্ত্রে ঘ্রাণ নিয়ে ‘ফট্’ মন্ত্রে ঈশানকোণে নিক্ষেপ করবে।
পুষ্পশুদ্ধি- ‘ওঁ শতাভিষেক হূঁ ফট্ স্বাহা’ মন্ত্রে পুষ্পে জলের ছিটা দিয়ে ‘ওঁ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুষ্পে সুপুষ্পে পুষ্পসম্ভবে পুষ্পচয়াবকীর্ণে চ হূঁ ফট্ স্বাহা’ মন্ত্রে পুষ্প স্পর্শ করে শোধন করবে।

ত্রিবিধ বিঘ্নাপসারণ- ‘ওঁ ঐঁ’ মন্ত্র উচ্চারণ করে ঊর্ধ্বে দৃষ্টিপাতকরতঃ দিব্যবিঘ্নাপসারণ করবে। তারপর তর্জনী ও মধ্যমা দ্বারা বাম করতলে ঊর্ধ্ব ঊর্ধ্ব ক্রমে তালত্রয় দিয়ে দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনী দ্বারা পূর্বদিক থেকে আরম্ভ করে ঈশানকোণ পর্যন্ত এবং অধঃ ও ঊর্ধ্ব- এই দশ দিকে ‘ফট্’ মন্ত্রে তুড়ি দিয়ে দিগবন্ধন করবে। তারপর ‘ফট্’ মন্ত্রে বামপায়ের গোড়ালি দ্বারা ভূমিতে তিনবার আঘাত করে ভূমিবিঘ্ন অপসারণ করে ‘অস্ত্রায় ফট্’ মন্ত্রে ঊর্ধ্বদিকে জলের ছিটা দিয়ে অন্তরিক্ষবিঘ্ন দূর করবে।

দেবতা ও পূজাদ্রব্যশুদ্ধি- ‘ওঁ ঐং ফট্’ মন্ত্রে দেবতা ও পূজাদ্রব্য সামান্যার্ঘ্যের জলে তিনবার প্রোক্ষণ (জলের ছিটা) করবে ও ধেনুমুদ্রা দেখাবে আর ভাবনা করবে যে সকলই চিন্ময়, ঈশ্বরময়।

মন্ত্রশুদ্ধি- ‘অং হ্রীং অং; কং হ্রীং কং; চং হ্রীং চং; টং হ্রীং টং; তং হ্রীং তং; পং হ্রীং পং; যং হ্রীং যং; শং হ্রীং শং’ –এই মন্ত্র একবার জপ করবে।

বহ্নিপ্রাকারচিন্তা-
‘রং’ মন্ত্রে নিজের চারদিকে বৃত্তাকার জলধারা দিয়ে আগুনের প্রাচীর চিন্তা করবে।

দেহমার্জন ও আত্মরক্ষা- ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে করতলদ্বয় দ্বারা নিজদেহ মার্জনা করে হৃদয়ে হাত দিয়ে পাঠ করবে- ওঁ দুর্গে দুর্গে রক্ষিণি স্বাহা। ওঁ আং হূঁ ফট্ স্বাহা।

প্রাণায়াম- ডান হাতের তর্জনী ও মধ্যমা মুষ্ঠিবদ্ধ করে অঙ্গুষ্ঠ দিয়ে ডান নাসা টিপে বন্ধ করে বাম নাসাপুটে বায়ু আকর্ষণ করতে করতে ৪ বার ‘ওঁ’ (অথবা ‘ঐং’) জপ করবে। অতঃপর অনামিকা ও কনিষ্ঠা দ্বারা বাম নাসাপুট টিপে বায়ু রুদ্ধ রেখে ‘ওঁ’ (অথবা ‘ঐং’মন্ত্র ১৬ বার জপ করবে। অনন্তর ডান নাসা থেকে অঙ্গুষ্ঠ সরিয়ে নিয়ে ঐ নাসাপুট দ্বারাই ধীরে ধীরে বায়ু রেচন করবে। রেচনকালে ‘ওঁ’ (অথবা ‘ঐং’মন্ত্র ৮ বার জপ করবে। এইভাবে পূরক, কুম্ভক ও রেচক করলে একত্রে একটি প্রাণায়াম হয়। এই পদ্ধতিতে অবিচ্ছেদে তিনবার প্রাণায়াম করবে। সমর্থ হলে ১৬/৬৪/৩২ সংখ্যায়ও প্রাণায়াম করা যেতে পারে।
ভূতশুদ্ধি (সংক্ষিপ্ত)- স্বক্রোড়ে বাম হাতের উপর ডান হাত চিৎভাবে স্থাপন করে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করবে-
ওঁ ভূতশৃঙ্গাটাচ্ছিরঃ সুষুম্নাপথেন
জীবশিবং পরমশিবপদে যোজয়ামি স্বাহা ।।১।।
ওঁ যং লিঙ্গশরীরং শোষয় শোষয় স্বাহা ।।২।।
ওঁ রং সংঙ্কোচশরীরং দহ দহ স্বাহা ।।৩।।
ওঁ পরমশিব সুষুম্নাপথেন
মূলশৃঙ্গাটমুল্লসোল্লস জ্বল জ্বল প্রজ্বল প্রজ্বল
সোহহং হংসঃ স্বাহা ।।৪।।
এখানে, পূজক যে দেবতার পূজা করতে অগ্রসর, তিনি স্বয়ং সেই দেবতায় রূপান্তরিত হয়েছেন, এরূপ দৃঢ় ভাবনা করতে হবে।

ব্যাপকন্যাস- ‘আং হূঁ ফট্ স্বাহা’ মন্ত্রে মাথা থেকে পায়ের আঙ্গুল এবং পায়ের আঙ্গুল থেকে মাথা পর্যন্ত উভয় হাত দ্বারা তিনবার মার্জনা করবে। এতদ্বারা নিজ শরীর, বাক্য ও মন শুদ্ধ হল বলে চিন্তা করবে।

জীবন্যাস- নতুন রচিত দিব্যদেহে ইষ্টদেবতার (যে দেবতার পূজা করছে) প্রাণ-প্রতিষ্ঠা করার জন্য ‘সোহহং’ (তিনিই আমি) ভাবনা করে লেলিহান মুদ্রায় হৃদয় স্পর্শ করে পাঠ করবে ও আপনাকে দেবতাময় ভাবনা করবে-
ওঁ আং হ্রীঁ ক্রোং যং রং লং বং শং ষং সং হৌঁ হংসঃ অস্যা শ্রীসরস্বতী-দেব্যাঃ প্রাণা ইহ প্রাণাঃ।
ওঁ আং হ্রীঁ ক্রোং যং রং লং বং শং ষং সং হৌঁ হংসঃ অস্যা শ্রীসরস্বতী-দেব্যাঃ জীব ইহ স্থিতঃ।
ওঁ আং হ্রীঁ ক্রোং যং রং লং বং শং ষং সং হৌঁ হংসঃ অস্যা শ্রীসরস্বতী-দেব্যাঃ সর্বেন্দ্রিয়াণি।
 ওঁ আং হ্রীঁ ক্রোং যং রং লং বং শং ষং সং হৌঁ হংসঃ অস্যা শ্রীসরস্বতী-দেব্যাঃ বাঙ্ মনশ্চক্ষুস্ত্বক-শ্রোত্র-ঘ্রাণপ্রাণা ইহাগত্য সুখং চিরং তিষ্ঠন্তু স্বাহা।

মাতৃকান্যাস- কৃতাঞ্জলিপুটে পাঠ- ওঁ অস্য মাতৃকামন্ত্রস্য ব্রহ্ম ঋষির্গায়ত্রীচ্ছন্দো দেবী মাতৃকা সরস্বতী দেবতা, হলো বীজানি স্বরাঃ শক্তয়ঃ অব্যক্তং কীলকং সর্বাভীষ্টসিদ্ধয়ে লিপিন্যাসে বিনিয়োগঃ।
তত্ত্বমুদ্রায় স্পর্শ করে বলবে  : মস্তকে- ওঁ ব্রহ্মণে ঋষয়ে নমঃ; মুখে- ওঁ গায়ত্রীচ্ছন্দসে নমঃ; হৃদয়ে- ওঁ মাতৃকাসরস্বত্যৈ দেবতায়ৈ নমঃ; মূলাধারে- ওঁ হলভ্যো বীজেভ্যো নমঃ; পাদদ্বয়ে- ওঁ স্বরেভ্যঃ শক্তিভ্যো নমঃ; সর্বাঙ্গে- ওঁ অব্যক্তকীলকায় নমঃ।

করন্যাস- উভয় হাতের তর্জনী সেই সেই হাতের অঙ্গুষ্ঠ-পৃষ্ঠে দিয়ে বলবে- অং কং খং গং ঘং ঙং আং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ। উভয় হাতের অঙ্গুষ্ঠ উভয় হাতের তর্জনীর পৃষ্ঠে দিয়ে পাঠ করবে- ইং চং ছং জং ঝং ঞং ঈং তর্জনীভ্যাং স্বাহা। উভয় হাতের অঙ্গুষ্ঠ উভয় হাতের মধ্যমার পৃষ্ঠে দিয়ে পাঠ করবে- উং টং ঠং ডং ঢং ণং ঊং মধ্যমাভ্যাং বষট্ । উভয় হাতের অঙ্গুষ্ঠ উভয় হাতের অনামিকার পৃষ্ঠে রেখে পাঠ করবে- এং তং থং দং ধং নং ঐং অনামিকাভ্যাং হূঁ । উভয় হাতের অঙ্গুষ্ঠ উভয় হাতের কনিষ্ঠার পৃষ্ঠে দিয়ে পাঠ করবে- ওং পং ফং বং ভং মং ঔং কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্। অতঃপর অং যং রং লং বং শং ষং সং হং লং ক্ষং অঃ করতলপৃষ্ঠাভ্যাং অস্ত্রায় ফট্- এই মন্ত্র পাঠ করে ডান হাতের যুক্ত তর্জনী ও মধ্যমা দ্বারা বাম হাতের তল ও পৃষ্ঠ স্পর্শ করে বাম করতলে তালি দিবে।

অঙ্গন্যাস- ডান হাতের তর্জনী, মধ্যমা ও অনামিকার অগ্রভাগ দ্বারা বক্ষঃস্থল স্পর্শ করে পাঠ করবে- অং কং খং গং ঘং ঙং আং হৃদয়ায় নমঃইং চং ছং জং ঝং ঞং ঈং শিরসে স্বাহা- মন্ত্রে তর্জনী ও মধ্যমার অগ্রভাগ দ্বারা মস্তক; উং টং ঠং ডং ঢং ণং ঊং শিখায়ৈ বষট্- মন্ত্রে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের দ্বারা শিখা; এং তং থং দং ধং নং ঐং কবচায় হূঁ- মন্ত্রে ডান হাতের পঞ্চাঙ্গুলির অগ্রভাগ দ্বারা বাম বাহুমূল এবং বাম হাতের পঞ্চাঙ্গুলির অগ্রভাগ দ্বারা ডান বাহুমূল; ওং পং ফং বং ভং মং ঔং নেত্রত্রয়ায় বৌষট্- মন্ত্রে তর্জনী, মধ্যমা ও অনামিকার অগ্রভাগ দ্বারা যথাক্রমে দক্ষিণ নেত্র, ঊর্ধ্ব নেত্র (নাসামূল) ও বাম নেত্র স্পর্শ করবে। অং যং রং লং বং শং ষং সং হং লং ক্ষং অঃ করতলপৃষ্ঠাভ্যাং অস্ত্রায় ফট্- মন্ত্রে ডান হাতের যুক্ত তর্জনী ও মধ্যমা দ্বারা বাম হাতের তল ও পৃষ্ঠ স্পর্শ করে বাম করতলে তালি দিবে।

গুর্বাদিপূজা- গুরু ও গণেশাদি পঞ্চদেবতার পূজা নিম্নোক্ত মন্ত্রে গন্ধপুষ্পে করা যেতে পারে। সমস্ত পূজাই সন্মুখবর্তী তাম্রকুণ্ডস্থ জলে করবে।
ওঁ ঐঁ এতে গন্ধপুষ্পে শ্রীগুরবে নমঃ।
ওঁ গং এতে গন্ধপুষ্পে শ্রীগণেশায় নমঃ।
ওঁ নমঃ শিবায় এতে গন্ধপুষ্পে শিবায় নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে শ্রীসূর্যায় নমঃ।
ওঁ নমো নারায়ণায় এতে গন্ধপুষ্পে নারায়ণায় নমঃ।
ওঁ হ্রীঁ এতে গন্ধপুষ্পে শ্রীজয়দুর্গায়ৈ নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে আদিত্যাদি-নবগ্রহেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ইন্দ্রাদি-দশদিকপালেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে কাল্যাদি-দশমহাবিদ্যাভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে মৎস্যাদি-দশাবতারেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে সর্বেভ্যো দেবেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে সর্বাভ্যো দেবীভ্যো নমঃ।

পীঠন্যাস- মৃগমুদ্রায় বক্ষস্থল স্পর্শ করে বলবে- ওঁ হ্রীং পীঠদেবতাভ্যো নমঃ; ওঁ হ্রীং পীঠশক্তিভ্যো নমঃ।

ঋষ্যাদিন্যাস- হাত জোড় করে পাঠ করবে- ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ ইত্যস্য মন্ত্রস্য কণ্বঋষির্বিরাড্ গায়ত্রীচ্ছন্দঃ বাগীশ্বরী দেবতা মম সর্বাভীষ্টসিদ্ধয়ে শ্রীসরস্বতী পূজনে বিনিয়োগঃ।
তত্ত্বমুদ্রায় স্পর্শ করবে; মস্তকে- ওঁ কণ্বায় ঋষয়ে নমঃ; মুখে- ওঁ বিরাড্ গায়ত্র্যৈচ্ছন্দসে নমঃ; হৃদয়ে- ওঁ বাগীশ্বর্যৈ দেবতায়ৈঃ নমঃ।

করন্যাস- (স্পর্শ প্রভৃতি পূর্বোক্ত করন্যাসের অনুরূপ) সাং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ; সীং তর্জনীভ্যাং স্বাহা; সূং মধ্যমাভ্যাং বষট্; সৈং অনামিকাভ্যাং হূং; সৌং কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্; সঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যাম্ অস্ত্রায় ফট্।

অঙ্গন্যাস- (স্পর্শ প্রভৃতি পূর্বোক্ত অঙ্গন্যাসের অনুরূপ) সাং হৃদয়ায় নমঃ; সীং শিরসে স্বাহা; সূং শিখায়ৈ বষট্; সৈং কবচায় হূং; সৌং নেত্রত্রয়ায় বৌষট্; সঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যাম্ অস্ত্রায় ফট্।

ব্যাপকন্যাস- ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ- মন্ত্রে পাঁচবার দুই হাতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত এবং পা থেকে মাথা পর্যন্ত মার্জনা করবে।

ধ্যান- কূর্মমুদ্রায় হাতে ফুল নিয়ে হৃদয়ে জ্যোতির্ময় মূর্তি ভাবনাপূর্বক ধ্যান করবে-
ওঁ তরুণশকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ
কুচভর-নমিতাঙ্গী সন্নিষন্না সিতাব্জে।
নিজ-করকমলোদ্যল্লেখনীপুস্তকশ্রীঃ
সকলবিভবসিদ্ধ্যৈ পাতু বাগদেবতা নঃ।।
মানসপূজা- ধ্যানান্তে হাতের ফুল মাথায়  স্থাপন করে কোলে বাম করতলের উপর দক্ষিণ করপৃষ্ঠ রেখে মানস উপচারে পূজা করবে। হৃদয়কেই দেবতার আসন কল্পনা করে সেখানে তাঁর আবাহন করবে। অতঃপর সহস্রদলকমল-নিঃসৃত সুধারূপ পাদ্য, মনোরূপ অর্ঘ্য, পূর্বোক্ত সুধারূপ আচমনীয় ও স্নানীয়, আকাশতত্ত্বরূপ বসন, ক্ষিতিতত্ত্বরূপ গন্ধ, চিত্তরূপ পুষ্প, প্রাণরূপ ধূপ, তেজস্তত্ত্বরূপ দীপ, সুধাসমুদ্ররূপ নৈবেদ্য মনে মনে প্রদান করবে।

বিশেষার্ঘ্য স্থাপন- পূজক নিজের সামনে কোশার বাম দিকে একটি নিম্নমুখ ত্রিকোণ, তার বাইরে
 বৃত্ত ও তার বাইরে চতুষ্কোণ মণ্ডল এঁকে সামান্যার্ঘ্যের জল দ্বারা প্রোক্ষণ করবে এবং ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে আধারশক্তয়ে নমঃ’ মন্ত্রে মণ্ডল পূজা করবে। মণ্ডলের উপর ত্রিপদিকা স্থাপন করে ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে মং বহ্নিমণ্ডলায় দশকলাত্মনে নমঃ’ মন্ত্রে ত্রিপদিকায় পূজা করবে। ‘হূঁ ফট্’ মন্ত্রে শঙ্খ ধুয়ে ত্রিপদিকার উপর রেখে ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে অং অর্কমণ্ডলায় দ্বাদশকলাত্মনে নমঃ’ মন্ত্রে পূজা করবে। পরে ‘ঐং’ মন্ত্র উচ্চারণ করে শঙ্খের তিনভাগ জল দ্বারা পূর্ণ করবে এবং ‘নমঃ’ মন্ত্রে গন্ধপুষ্প, দুর্বা ও আতপ তণ্ডুল দিয়ে অর্ঘ্য রচনা করে তদুপরি স্থাপনপূর্বক ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে উং সোমমণ্ডলায় ষোড়শকলাত্মনে নমঃ’ মন্ত্রে  অর্ঘ্য জলে পূজা করবে। পরে অঙ্কুশ মুদ্রায় ঐ জল স্পর্শ করে ‘ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি নর্মদে সিন্ধুকাবেরি জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু’ মন্ত্রে সূর্যমণ্ডল থেকে তীর্থ আবাহন করবে এবং ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে তীর্থেভ্যো নমঃ’ মন্ত্রে তীর্থ পূজা করবে। পরে ‘বষট্’ মন্ত্রে গালিনী মুদ্রা দেখিয়ে পূজা করবে- ‘ওঁ ঐং এতে গন্ধপুষ্পে শ্রীসরস্বতীদেবতাভ্যো নমঃ’। অতঃপর আবাহন্যাদি পঞ্চমুদ্রা দেখিয়ে শঙ্খে দেবতার আবাহন করবে-
‘ওঁ ঐং সরস্বতী দেবি ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ (আবাহনী মুদ্রা দ্বারা);  ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ (স্থাপনী মুদ্রা দ্বারা); ইহ সন্নিধেহি ইহ সন্নিধেহি (সন্নিধাপনী মুদ্রা দ্বারা); ইহ সন্নিরুধ্যস্ব ইহ সন্নিরুধ্যস্ব (সংরোধনী মুদ্রা দ্বারা); ইহ সম্মুখী ভব ইহ সম্মুখী ভব (সম্মুখীকরণ মুদ্রা দ্বারা) অত্রাধিষ্ঠানং কুরু, মম পূজাং গৃহাণ’ (করজোড়ে) বলবে। পরে ‘ওঁ ঐং এতে গন্ধপুষ্পে সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করে মৎস্যমুদ্রায় অর্ঘ্য আচ্ছাদনপূর্বক ‘ওঁ’ মন্ত্র দশবার জপ করবে। তারপর বাম করতলে দক্ষিণ হস্তের তর্জনী ও মধ্যমা যোগে ‘ফট্’ মন্ত্রে ঊর্ধ্বোর্ধ্বে তালত্রয় দিয়ে ধেনু, যোনি ও পরমীকরণ মুদ্রা প্রদর্শন করবে। শঙ্খ কাৎ করে কিঞ্চিৎ জল কুশীতে ঢেলে সেই জল ‘ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে নিজের মাথায় ও পূজাদ্রব্যে ছিটিয়ে দিবে।

পীঠপূজা- ‘ওঁ হ্রীং এতে গন্ধপুষ্পে পীঠদেবতাভ্যো নমঃ; ওঁ হ্রীং এতে গন্ধপুষ্পে পীঠশক্তিভ্যো নমঃ’ মন্ত্রে তাম্রকুণ্ডে পূজা করবে। পুনরায়-

করন্যাস- (স্পর্শ প্রভৃতি পূর্বোক্ত করন্যাসের অনুরূপ) সাং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ; সীং তর্জনীভ্যাং স্বাহা; সূং মধ্যমাভ্যাং বষট্; সৈং অনামিকাভ্যাং হূং; সৌং কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্; সঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যাম্ অস্ত্রায় ফট্।
অঙ্গন্যাস- (স্পর্শ প্রভৃতি পূর্বোক্ত অঙ্গন্যাসের অনুরূপ) সাং হৃদয়ায় নমঃ; সীং শিরসে স্বাহা; সূং শিখায়ৈ বষট্; সৈং কবচায় হূং; সৌং নেত্রত্রয়ায় বৌষট্; সঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যাম্ অস্ত্রায় ফট্।
ব্যাপকন্যাস- ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ- মন্ত্রে পাঁচবার  দুই হাতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত এবং পা থেকে মাথা পর্যন্ত মার্জনা করবে।
ধ্যান- কূর্মমুদ্রায় হাতে ফুল নিয়ে হৃদয়ে জ্যোতির্ময় মূর্তি ভাবনাপূর্বক ধ্যান করবে-
‘ওঁ তরুণশকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ
কুচভর-নমিতাঙ্গী সন্নিষন্না সিতাব্জে।
নিজ-করকমলোদ্যল্লেখনীপুস্তকশ্রীঃ
সকলবিভবসিদ্ধ্যৈ পাতু বাগদেবতা নঃ’।।
ধ্যানান্তে হৃদয়স্থ অষ্টদলপদ্মের দেবতার জ্যোতির্ময় মূর্তি হস্তস্থিত পুষ্পে আবির্ভূত ভাবনা করে সেই পুষ্প তাম্রকুণ্ডে বা পূজাধারে  স্থাপন করবে।
[ এখন অপ্রতিষ্ঠিত মূর্তি বা পট হলে সেই মূর্তিতে বা পটে এবং ঘটে পূজা হলে ঘটে আবাহন করতে হবে।]

আবাহন- আবাহন্যাদি পঞ্চমুদ্রায় আবাহন করবে-
‘ওঁ ঐং সরস্বতী দেবি ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ (আবাহনী মুদ্রা দ্বারা);  ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ (স্থাপনী মুদ্রা দ্বারা); ইহ সন্নিধেহি ইহ সন্নিধেহি (সন্নিধাপনী মুদ্রা দ্বারা); ইহ সন্নিরুধ্যস্ব ইহ সন্নিরুধ্যস্ব (সংরোধনী মুদ্রা দ্বারা); ইহ সম্মুখী ভব ইহ সম্মুখী ভব (সম্মুখীকরণ মুদ্রা দ্বারা) অত্রাধিষ্ঠানং কুরু, মম পূজাং গৃহাণ’ (করজোড়ে)। অতঃপর ‘হূং’ মন্ত্রে মূর্তিতে বা পটে বা ঘটে অবগুণ্ঠন মুদ্রা দেখিয়ে দেবতার অঙ্গে ষড়াঙ্গন্যাস করতে হবে।

ষড়াঙ্গন্যাস- এক একটি ফুল নিয়ে ‘সাং হৃদয়ায় নমঃ; সীং শিরসে স্বাহা; সূং শিখায়ৈ বষট্; সৈং করচায় হূং; সৌং নেত্রত্রয়ায় বৌষট্; সঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যাং অস্ত্রায় ফট্’ ইত্যাদি ক্রমে দেবতার অঙ্গে নিক্ষেপ করতে হবে। পরে ধেনু মুদ্রা ও পরমীকরণ মুদ্রা প্রদর্শন করবে।
[অপ্রতিষ্ঠিত মূর্তি বা পটে পূজা হলে এখন চক্ষুদান ও প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ঘটে বা শালগ্রামে পূজা হলে এর দরকার নেই।]

চক্ষুদান- ঘৃত দ্বারা একটি বিল্বপত্রে কাজল প্রস্তুত করে আর একটি বিল্বপত্রের বোঁটা দ্বারা সেই কাজল নিয়ে ‘ওঁ বাগ্দেব্যৈ বিদ্মহে কামরাজায় ধীমহি তন্নো দেবি প্রচোদয়াৎ ওঁ’ –সরস্বতীর এই গায়ত্রী মন্ত্র পাঠপূর্বক প্রথমে ঊর্ধ্বনেত্রে পরে বামনেত্রে তৎপরে দক্ষিণ নেত্রের মণিতে দিয়ে চক্ষুদান করবে।

প্রাণ প্রতিষ্ঠা- প্রতিমার গণ্ডদ্বয় ধরে পাঠ করবে-
ওঁ হংসঃ শুচিষদ্ বসুরন্তরিক্ষসদ্ হোতা বেদিসদ্ অতিথিঃ দুরোণসদ্ নৃষদ্ বরসদ্ ব্যোমসদ্ অব্জা গোজা ঋতজা অদ্রিজা ঋতং বৃহৎ।
ওঁ প্রতদ্বিষ্ণুঃ স্তবতে বীর্য্যেণ মৃগো ন ভীমঃ কুচরো গিরিষ্ঠা, যস্যোরুষু ত্রিষু বিক্রমণেষ্বধিক্ষিয়ন্তি ভুবানি বিশ্বাঃ।
ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্।
ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্। উর্ব্বারুকমিব বন্ধনান্মৃত্যোঃ মুক্ষীয়মামৃতাৎ।
ওঁ তদ্বিপ্রাসো বিপণ্যবো জাগৃবাংসঃ সমিন্ধতে বিষ্ণোর্যৎ পরমং পদম্।
ওঁ বিষ্ণুর্যোনিং কল্পয়তু ত্বষ্টা রূপাণি পিংসতু। আসিঞ্চতু প্রজাপতির্ধাতা গর্ভং দধাতু তে।
ওঁ গর্ভং ধেহি সিনীবালি গর্ভং ধেহি সরস্বতি। গর্ভং তে অশ্বিনৌ দেবাবাধত্তাং পুষ্করস্রজৌ ।।

কুশপুষ্পযুক্ত হস্ত প্রতিমার মস্তকে স্থাপনপূর্বক ১০৮ বার মূলমন্ত্র (ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ) জপ করে গণ্ডস্থল ধরে পাঠ করবে এবং বাম হাতে ঘন্টাধ্বনি করবে-
ওঁ আং হ্রীঁ ক্রোং যং রং লং বং শং ষং সং হৌঁ হংসঃ অস্যা শ্রীসরস্বতী-দেব্যাঃ প্রাণা ইহ প্রাণাঃ।
ওঁ আং হ্রীঁ ক্রোং যং রং লং বং শং ষং সং হৌঁ হংসঃ অস্যা শ্রীসরস্বতী-দেব্যাঃ জীব ইহ স্থিতঃ।
ওঁ আং হ্রীঁ ক্রোং যং রং লং বং শং ষং সং হৌঁ হংসঃ অস্যা শ্রীসরস্বতী-দেব্যাঃ সর্বেন্দ্রিয়াণি।
 ওঁ আং হ্রীঁ ক্রোং যং রং লং বং শং ষং সং হৌঁ হংসঃ অস্যা শ্রীসরস্বতী-দেব্যাঃ বাঙ্ মনশ্চক্ষুস্ত্বক-শ্রোত্র-ঘ্রাণপ্রাণা ইহাগত্য সুখং চিরং তিষ্ঠন্তু স্বাহা।
এইবার লেলিহান মুদ্রায় দূর্বা ও আতপ তণ্ডুল নিয়ে দেবীর হৃদয় স্পর্শ করে বলবে-
ওঁ অস্যৈ প্রাণাঃ প্রতিষ্ঠন্তু অস্যৈ প্রাণাঃ ক্ষরন্তু চ। অস্যৈ দেবত্বসংখ্যায়ৈ স্বাহা।
ওঁ মনোজূতির্জুষতামাজ্যস্য বৃহস্পতির্যজ্ঞমিমং তনোত্বরিষ্টং যজ্ঞং সমিমং দধাতু বিশ্বেদেবাস ইহ মাদয়ন্তামোং প্রতিষ্ঠা।
অতঃপর দেবতা শরীরে অঙ্গন্যাস করবে-
অঙ্গন্যাস- (স্পর্শ প্রভৃতি পূর্বোক্ত অঙ্গন্যাসের অনুরূপ) সাং হৃদয়ায় নমঃ; সীং শিরসে স্বাহা; সূং শিখায়ৈ বষট্; সৈং কবচায় হূং; সৌং নেত্রত্রয়ায় বৌষট্; সঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যাম্ অস্ত্রায় ফট্।
পরে যথাশক্তি উপচারে পূজা করবে।
[জ্ঞাতব্য:- পূজার উপচার ত্রিবিধ, ষোড়শোপচার, দশোপচার এবং পঞ্চোপচার। সমর্থ হলে ষোড়শোপচার, তাতে অসমর্থ হলে দশোপচার, তাতেও অসমর্থ হলে পঞ্চোপচার , তাতেও অসমর্থ হলে কেবলমাত্র গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা, তাতেও অসমর্থ হলে কেবলমাত্র জল দ্বারা পূজা করা যায়।
ষোড়শোপচার- আসন, স্বাগত, পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, মধুপর্ক, পুনরাচমনীয়, স্নানীয়, বসন, আভরণ, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, পুনরাচমনীয়, । এছাড়াও পুংদেবতার তৈল, পৈতা, উত্তরীয় (চাদর), মালা, তাম্বূল (পান); স্ত্রীদেবতার শাঁখা, সিন্দুর, আয়না, চিরুনি, কাজল, আলতা এই সবও দেওয়া হয়।
দশোপচার- পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, মধুপর্ক (মধুপর্কস্থলে অনেকে স্নানজল দিয়ে থাকেন), পুনরাচমনীয়, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য।
পঞ্চোপচার- গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য।]

 দশোপচারে পূজা-
পাদ্য- কুশীতে সামান্যার্ঘ্য জল নিয়ে তাতে অগুরু, চন্দন, ফুল প্রভৃতি দিবে এবং ‘ওঁ ঐং এতৎ পাদ্যং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে দেবতার চরণযুগল ধুইয়ে দিচ্ছি, এরূপ চিন্তা করে চরণযুগলের উদ্দেশ্যে অর্পন করবে।
অর্ঘ্য- পূর্বস্থাপিত বিশেষার্ঘ্য হাতে নিয়ে ‘ওঁ ঐং এষঃ অর্ঘ্যঃ সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে দেবতার মস্তকে দিবে।

আচমনীয়- পাত্রস্থিত জল কর্পূরাদি দিয়ে সুবাসিত করে ‘ওঁ ঐং ইদমাচমনীয়ং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে দেবতার উদ্দেশ্যে দিবেন।

স্নানীয়- একটি পাত্রে গন্ধতৈল, ভৃঙ্গারাদি পাত্র বা কুশীতে চন্দন, কর্পূর, অগুরু প্রভৃতি মিশ্রিত জল নিয়ে তাতে সচন্দন পুষ্প ও তুলসীপত্র নিবে, একটি আধারে বস্ত্র নিবে এবং এতদ্সঙ্গে সিন্দুর নিয়ে ‘ওঁ ঐং স্নানীয়োদকং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে নিবেদন করবে।

গন্ধ- কোন পাত্রে বা বেলপাতায় চন্দন, অগুরু ও সুবাসিত অন্যান্য গন্ধদ্রব্য একত্র নিয়ে ‘ওঁ ঐং এষ গন্ধঃ সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে নিবেদন করবে।

পুষ্প- পাঁচটি নানাবিধ সদ্য প্রস্ফুটিত (পচা, বাসি, দলিত, পোকাখাওয়া বাদে) সচন্দন পুষ্প আধারে নিয়ে ‘ওঁ ঐং ইদং সচন্দনপুষ্পং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে জ্ঞানমুদ্রায় (তর্জনী-অঙ্গুষ্ঠ যোগে) অর্পন করবে।

বিল্বপত্র- পাঁচটি সচন্দন বিল্বপত্র নিয়ে ‘ওঁ ঐং ইদং সচন্দনবিল্বপত্রং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে জ্ঞানমুদ্রায় দেবতাকে অর্পন করবে।
ধূপ- প্রজ্বলিত ধূপ আধারে স্থাপনপূর্বক ‘ওঁ ঐং এষ ধূপঃ সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে অর্ঘ্য জল প্রক্ষেপ দ্বারা নিবেদন করে বাম হাতে ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে ডান হাতের মধ্যমা ও অনামার ,মধ্যমপর্বে অঙ্গুষ্ঠাগ্রসংযোগে ধূপ উত্তোলন করবে এবং দেবতার গায়ত্রী ( ওঁ বাগদেব্যৈ বিদ্মহে কামরাজায় ধীমহি তন্নো দেবি প্রচোদয়াৎ ওঁ ) পাঠ করতে করতে তাঁর নাসিকা পর্যন্ত তিনবার ঘুরিয়ে নিজের ডান দিকে রাখবে।

দীপ-
প্রজ্বলিত দীপ ‘ওঁ ঐং এষ দীপঃ সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে ধূপ নিবেদনের মত দেবতার চোখ পর্যন্ত ভ্রামিত করবে ও দীপ পাত্রে নিজের বামদিকে রাখবে।

নৈবেদ্য নিবেদন বিধি-
নিম্নোক্ত ক্রমে নৈবেদ্য নিবেদন করবে। দেবতার সম্মুখে অথবা দক্ষিণে আধারোপরি নৈবেদ্য পাত্র স্থাপন করে ‘বং এতস্মৈ সোপকরণ-নৈবেদ্যায় নমঃ’ (অন্ন হলে-‘বং এতস্মৈ সোপকরণ-অন্নায় নমঃ’) মন্ত্রে তিনবার জলের ছিটা দিয়ে প্রোক্ষণ করবে। অতঃপর ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বং এতস্মৈ সোপকরণনৈবেদ্যায় নমঃ’ মন্ত্রে নৈবেদ্যে গন্ধপুষ্প দিবে। গন্ধপুষ্পে পূজা করবে- ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় শ্রীবিষ্ণবে নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতৎ-সম্প্রদানায় সরস্বত্যৈ নমঃ’ অনন্তর ‘হূং’ মন্ত্রে অবগুণ্ঠন মুদ্রা প্রদর্শন, চক্রমুদ্রায় অভিরক্ষণ, ‘যং’ মন্ত্রে দোষশোষণ, ‘রং’ মন্ত্রে দহন এবং ‘বং’ মন্ত্রে ধেনুমুদ্রা প্রদর্শন করে নৈবেদ্য অমৃতময় ভাবনা করবে। অতঃপর মৎস্যমুদ্রায় নৈবেদ্য আচ্ছাদন করে ‘ঐং’ মন্ত্র দশবার জপ করবে।‘ওঁ ঐং ইদং সোপকরণনৈবেদ্যং (অন্ন হলে- সোপকরণমন্নং) সরস্বত্যৈ নিবেদয়ামি’ মন্ত্রে তিনবার অর্ঘ্যজল প্রোক্ষণ করে (অঙ্গুষ্ঠ-অনামাযোগে ছিটিয়ে) দেবতাকে  নিবেদন করবে । কুশীতে অর্ঘ্যজল নিয়ে ‘ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা’ মন্ত্রে তাম্রকুণ্ডে নিক্ষেপ করবে। বাম হাতের তালুতে জল নিয়ে গ্রাসমুদ্রা প্রদর্শনপূর্বক ডান হাতে ‘প্রাণায় স্বাহা’, অপানায় স্বাহা’, ব্যানায় স্বাহা’, ‘উদানায় স্বাহা’, ‘সমানায় স্বাহা’-মন্ত্রে পঞ্চমুদ্রা প্রদর্শন করে কিছুক্ষণ চিন্তা করবে যে দেবতা নৈবেদ্য গ্রহণ করছেন। ঐ সময় মূলমন্ত্র ‘ঐং’ জপ করবে। পুনরায় অর্ঘ্যজল নিয়ে ‘ওঁ অমৃতাপিধানমসি স্বাহা’-মন্ত্রে তাম্রকুণ্ডে নিক্ষেপ করবে। অতঃপর পানীয়, পুনরাচমনীয় ও তাম্বূল নিবেদন করবে-

পানীয়-
একটি পাত্রে কর্পূরাদি সুবাসিত জল নিয়ে ‘ওঁ ঐং ইদং পানার্থোদকং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে অর্ঘ্য জল ছিটিয়ে নিবেদন করবে ।

পুনরাচমনীয়-
একটি পাত্রে কর্পূরাদি সুবাসিত জল নিয়ে ‘ওঁ ঐং পুনরাচমনীয়োদকং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে অর্ঘ্য জল ছিটিয়ে নিবেদন করবে ।

তাম্বুল-
সুবাসিত তাম্বুল একটি আধারে নিয়ে ‘ওঁ ঐং ইদং তাম্বুলং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে অর্ঘ্য জল ছিটিয়ে নিবেদন করবে ।
সরস্বতী পূজার পর লক্ষ্মীপূজা ও নারায়ণপূজা করবে। পরে লেখনী, মস্যাধার, বাদ্যযন্ত্র, পুস্তক ও দেবীর বাহনকে পঞ্চোপচারে পূজা করবে। যথা-
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে লক্ষ্ম্যৈ নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে নমো নারায়ণায় নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে লেখন্যৈ নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে মস্যাধারায় নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে বাদ্যযন্ত্রেভ্যঃ নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে পুস্তকেভ্যঃ নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পধূপদীপনৈবেদ্যতাম্বুলে দেবীবাহনেভ্যঃ নমঃ। পরে আবীর দিয়ে-
‘ইদং রাগদ্রব্যং ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ’ বলে পূজা করবে। শ্রীসরস্বতীদেবীকে আম্রমুকুল ও পলাশফুল দিতে হয়। পরে পুষ্পাঞ্জলি দিবে।

পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র-
ওঁ ভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
বেদবেদান্ত বেদাঙ্গ বিদ্যাস্থানেভ্যঃ এব চ।।
ওঁ ঐং এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ শ্রীসরস্বত্যৈ নমঃ।

অতঃপর কৃতাঞ্জলি হয়ে প্রার্থনামন্ত্র পাঠ করবে। যথা:-

প্রার্থনামন্ত্র-
ওঁ যথা ন দেবো ভগবান্ ব্রহ্মা লোকপিতামহঃ।
ত্বাং পরিত্যজ্য সন্তিষ্ঠেৎ তথা ভব বরপ্রদা।।
ওঁ বেদাঃ শাস্ত্রাণি সর্বাণি নৃত্যগীতাদিকঞ্চ যৎ।
ন বিহীনং ত্বয়া দেবি তথা মে সন্তু সিদ্ধয়ঃ।।
ওঁ লক্ষ্মীর্ম্মেধা ধরা তুষ্টিগৌরী পুষ্টিঃ প্রভা ধৃতিঃ।
এতাভিঃ পাহি তনুভিরষ্টাভির্মাং সরস্বতী।।

অনন্তর প্রণাম করবে।
প্রণামমন্ত্র-
ওঁ জয় জয় দেবি চরাচরসারে কুচযুগশোভিতমুক্তাহারে
বীণারঞ্জিত পুস্তকহস্তে ভগবতি ভারতি দেবি নমোহস্তুতে।।
ওঁ সরস্বতি মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোহস্তুতে।।
সরস্বতী গায়ত্রীপাঠ- ওঁ বাগদেব্যৈ বিদ্মহে কামরাজায় ধীমহি তন্নো দেবি প্রচোদয়াৎ ওঁ এই গায়ত্রী ১০ বার জপ করবে।

মন্ত্রজপ- মূলমন্ত্র ‘ঐং’ যথাশক্তি জপ করে জপসমর্পণ করবে।

জপসমর্পণ- ডান হাতে এক গণ্ডুষ জল নিয়ে ‘ওঁ গুহ্যাতিগুহ্যগোপত্রী ত্বং গৃহাণাস্মৎকৃতং জপম্। সিদ্ধির্ভবতু মে দেবি ত্বৎপ্রসাদান্মহেশ্বরি’ এই মন্ত্র পাঠ করে গোযোনিমুদ্রায় দেবীর বামহস্তের উদ্দেশে অর্পণ করবে। অন্নভোগ না থাকলে সম্ভব হলে পঞ্চপ্রদীপ, কর্পূরদীপ, জলপূর্ণ শঙ্খ, ধৌতবস্ত্র, পুষ্প ও চামর এই কয়টি দ্রব্যে আরতি করবে। আরতির পর পূর্ববৎ মন্ত্রে প্রণাম করবে।
পরে ভোগ নিবেদন, আরতি, হোম ও দক্ষিণান্ত করবে।
[জ্ঞাতব্য- হোম না করলে পুষ্পাঞ্জলি ও প্রণামাদির পর ‘হ্রীং ক্লীং সর্বশান্তিকরো ভব’ মন্ত্রে চন্দন (শ্বেত ও রক্ত চন্দন) দ্বারা নিজের ও অপরের কপালে ফোঁটা দিবে। অতঃপর ক্ষমা প্রার্থনা ও সাষ্টাঙ্গ প্রণাম পর চরণামৃত পান করে প্রসাদ ধারণ করবে।]

অন্নভোগ নিবেদন- [ভোগ নিবেদনে নৈবেদ্য নিবেদনের রীতি অনুযায়ী সমস্ত কর্ম করতে হয় । কেবল নিবেদনের মন্ত্রে সামান্য পার্থক্য আছে । পাঠকের সুবিধার জন্য এখানে বিস্তারিত বর্ণনা করা হল।]
নিম্নোক্ত ক্রমে ভোগ নিবেদন করবে। দেবতার সম্মুখে অথবা দক্ষিণে আধারোপরি ভোগ পাত্র স্থাপন করে ‘বং এতস্মৈ সোপকরণ-অন্নায় নমঃ’ মন্ত্রে তিনবার জলের ছিটা দিয়ে প্রোক্ষণ করবে। অতঃপর ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বং এতস্মৈ সোপকরণ-অন্নায় নমঃ’ মন্ত্রে ভোগে গন্ধপুষ্প দিবে। গন্ধপুষ্পে পূজা করবে- ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় শ্রীবিষ্ণবে নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতৎ-সম্প্রদানায় সরস্বত্যৈ নমঃ’। অনন্তর ‘হূং’ মন্ত্রে অবগুণ্ঠন মুদ্রা প্রদর্শন, চক্রমুদ্রায় অভিরক্ষণ, ‘যং’ মন্ত্রে দোষশোষণ, ‘রং’ মন্ত্রে দহন এবং ‘বং’ মন্ত্রে ধেনুমুদ্রা প্রদর্শন করে ভোগ অমৃতময় ভাবনা করবে। অতঃপর মৎস্যমুদ্রায় ভোগ আচ্ছাদন করে ‘ঐং’ মন্ত্র দশবার জপ করবে। ‘ওঁ ঐং ইদং সোপকরণমন্নং সরস্বত্যৈ নিবেদয়ামি’ মন্ত্রে তিনবার অর্ঘ্যজল প্রোক্ষণ করে (অঙ্গুষ্ঠ-অনামাযোগে ছিটিয়ে) দেবতাকে  নিবেদন করবে । কুশীতে অর্ঘ্যজল নিয়ে ‘ওঁ অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা’ মন্ত্রে তাম্রকুণ্ডে নিক্ষেপ করবে। বাম হাতের তালুতে জল নিয়ে গ্রাসমুদ্রা প্রদর্শনপূর্বক ডান হাতে ‘প্রাণায় স্বাহা’, অপানায় স্বাহা’, ব্যানায় স্বাহা’, ‘উদানায় স্বাহা’, ‘সমানায় স্বাহা’-মন্ত্রে পঞ্চমুদ্রা প্রদর্শন করে কিছুক্ষণ চিন্তা করবে যে দেবতা ভোগ গ্রহণ করছেন। ঐ সময় মূলমন্ত্র ‘ঐং’ জপ করবে। পুনরায় অর্ঘ্যজল নিয়ে ‘ওঁ অমৃতাপিধানমসি স্বাহা’-মন্ত্রে তাম্রকুণ্ডে নিক্ষেপ করবে। অতঃপর পানীয়, পুনরাচমনীয় ও তাম্বূল পূর্ববৎ নিবেদন করবে।

আরাত্রিক- ভোগের পর আরাত্রিক করতে হয়। সন্ধ্যায় দীপারাধনা নিত্যই বিধেয়। সামান্যার্ঘ্যের পাশে একটি ত্রিকোণ মণ্ডল করে তদুপরি পঞ্চপ্রদীপ (বা দীপমালা) স্থাপন করবে এবং ‘ফট্’ মন্ত্রে প্রোক্ষণ করে ‘এতস্যৈ নীরাজনদীপমালায়ৈ নমঃ’ মন্ত্রে অর্ঘ্যজল দ্বারা অর্চনা করবে। পরে ‘এতদধিপতয়ে দেবায় বিষ্ণবে নমঃ, এতৎসম্প্রদানায় ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে অর্ঘ্যজল দ্বারা পূজা করবে।
‘ওঁ ঐং এষা দীপমালা সরস্বত্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে অর্ঘ্যজলবিন্দু প্রক্ষেপপূর্বক নিবেদন করবে এবং ডানহাতে দীপ উঠিয়ে বামহাতে ঘণ্টাধ্বনি করতে করতে মূলমন্ত্র (ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ) সহকারে দেবতার শ্রীচরণে চারবার, নাভিদেশে দুইবার, মুখমণ্ডলে তিনবার ও সর্বাঙ্গে সাতবার ঘুরিয়ে একপার্শ্বে রাখবে। পরে যথাক্রমে কর্পূরদীপ, জলপূর্ণ শঙ্খ, বস্ত্র, পুষ্প ও চামর দ্বারা পূর্ববৎ আরাত্রিক করবে। শেষে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করবে। অতঃপর হোম করবে।




সংক্ষিপ্ত হোম
উপক্রম- পূর্বমুখে বসে আচমন, সামান্যার্ঘ্য স্থাপন, আসনশুদ্ধি ও গুর্বাদিপ্রণাম করবে। তারপর বালি দিয়ে হস্তপ্রমাণ চতুষ্কোণ স্থণ্ডিল রচনা করে সেই স্থণ্ডিলের মধ্যভাগে তর্জনী-অঙ্গুষ্ঠযোগে কুশমূল দিয়ে বিন্দুগর্ভ ত্রিকোণ (পুংদেবতা হলে ঊর্ধ্বমুখে, স্ত্রীদেবতা হলে অধোমুখে), তার বাইরে ষটকোণ, তার বাইরে বৃত্ত এবং সেই বৃত্তকে অষ্টদল পদ্মের কর্ণিকারূপে কল্পনা করে তার আটদিকে আটটি দল আঁকবে, তার চারদিকে ভূপুর এঁকে তাতে অষ্টদল পদ্মের অগ্নিকোণে (পূর্ব-দক্ষিণ) ‘নমঃ’ মন্ত্রে অর্ধহস্ত পরিমিত উত্তরাগ্র তিনটি রেখা এবং বায়ুকোণে (উত্তর-পশ্চিম) পূর্বাগ্র তিনটি সরল রেখা আঁকবে।

স্থণ্ডিলপূজা- অতঃপর ‘ওঁ ঐং’ মূলমন্ত্রে স্থণ্ডিল বীক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে প্রোক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে কুশ দিয়ে তাড়ন, ‘হূঁ’ মন্ত্রে প্রোক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে ঊর্ধ্বোর্ধ্ব তালত্রয়ে রক্ষণ, মূলমন্ত্রে পুষ্পাঞ্জলি দান ও প্রণবে (ওঁ) অভ্যুক্ষণ করবে।
যন্ত্রের মধ্যস্থলে ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বহ্নের্যোগপীঠায় নমঃ’ মন্ত্রে গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করবে। পরে পূর্বাগ্র রেখা তিনটিতে যথাক্রমে পূজা করবে- ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে মুকুন্দায় নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ঈশানায় নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে পুরন্দরায় নমঃ’। উত্তরাগ্র রেখা তিনটিতেও যথাক্রমে পূজা করবে- ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ব্রহ্মণে নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বৈবস্বতায় নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে সরস্বতীস্থণ্ডিলায় নমঃ’ মন্ত্রে পূজা করবে।

বাগীশ্বরী ধ্যান- অতঃপর বাগীশ্বরী ধ্যান করবে-
ওঁ বাগীশ্বরীমৃতুস্নাতাং নীলেন্দীবরসন্নিভাম্। বাগীশ্বরেণ সংযুক্তাং ক্রীড়াভাবসমন্বিতাম্। সরস্বতীস্বরূপাম্।। [ যে দেবতার পূজা হবে তাঁর নাম যুক্ত হবে।] এবার সমিধ কাঠ সাজিয়ে নিতে হবে। পরে গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করবে- ওঁ হ্রীং এতে গন্ধপুষ্পে বাগীশ্বর্যৈ নমঃ। ওঁ হ্রীং এতে গন্ধপুষ্পে বাগীশ্বরায় নমঃ।

অগ্নি শোধন-
যথাবিহিত অগ্নি এনে বিহিত পাত্রে (কাংস্যপাত্রে বা সমিধোপরি) স্থাপনপূর্বক মূলান্তে ‘ওঁ ঐঁ সরস্বত্যৈ বৌষট্’ মন্ত্রে বীক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে কুশদ্বারা তাড়ন, ‘ফট্’ মন্ত্রে প্রোক্ষণ, ‘হূঁ’ মন্ত্রে অবগুণ্ঠন মুদ্রা প্রদর্শন, ‘বং’ মন্ত্রে ধেনুমুদ্রা প্রদর্শন দ্বারা অগ্নি সংস্কার করে ‘রং’ মন্ত্রে কিঞ্চিন্মাত্র অগ্নি নিয়ে ‘হূঁ ফট্ ক্রব্যাদেভ্যঃ স্বাহা’ মন্ত্রে র্নৈঋত (দক্ষিণ-পশ্চিম) কোণে পরিত্যাগ করবে।

অগ্নি-স্থাপন-
অনন্তর ‘ওঁ’ মন্ত্রে দুই হাতে অগ্নি উত্তোলন করে মণ্ডলোপরি তিনবার দক্ষিণাবর্তে ঘুরিয়ে হাঁটু পেতে বিপরীত দিক থেকে আপনার অভিমুখে মণ্ডলমধ্যস্থলে সেই  বহ্নি স্থাপন করবে। পরে ‘রং বহ্নিমূর্তয়ে নমঃ, রং বহ্নিচৈতন্যায় নমঃ’ মন্ত্রদ্বয়ে গন্ধপুষ্প দিয়ে পূজা করবে এবং ‘ওঁ চিৎপিঙ্গল হন হন দহ দহ পচ পচ সর্বজ্ঞাজ্ঞাপয় স্বাহা’ মন্ত্রে জ্বালিনীমুদ্রা দেখিয়ে অগ্নি প্রজ্বলিত করবে ও করজোড়ে পাঠ করবে- ‘ওঁ অগ্নিং প্রজ্বলিতং বন্দে জাতবেদং হুতাশনম্। সুবর্ণবর্ণমমলং সমিদ্ধং বিশ্বতোমুখম্।। এরূপে উপাসনা করে অগ্নির নামকরণ করবে- ‘ওঁ অগ্নে ত্বং সরস্বতীনামাসি’ (যে দেবতার পূজা হবে তাঁর নাম বসবে)।

অগ্নি-আবাহন- অতঃপর আবাহনাদি পঞ্চমুদ্রায় অগ্নির আবাহন করবে- ওঁ সরস্বতীনামাগ্নে ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ। ইহ তিষ্ঠ, ইহ তিষ্ঠ। ইহ সন্নিধেহি, ইহ সন্নিধেহি। ইহ সন্নিরুদ্ধস্ব, ইহ সন্নিরুদ্ধস্ব। ইহ সম্মুখীভব, ইহ সম্মুখীভব। অত্রাধিষ্ঠানং কুরু, মম পূজাং গৃহাণ।

অগ্নি-পূজা- পঞ্চোপচারে ঐ অগ্নির অর্চনা করবে-
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
এষ গন্ধঃ সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
ইদং সচন্দনপুষ্পং সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
এষ ধূপ সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
এষ দীপঃ সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
ইদং সোপকরণনৈবেদ্যং সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা
ইদং তাম্বুলং সরস্বতীনামাগ্নয়ে নমঃ।
পরে গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করবে-
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে অগ্নের্হিরণ্যাদিসপ্তজিহ্বাভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে সহস্রার্চিষে হৃদয়ায় নমঃ ইত্যাদ্যগ্নিষড়ঙ্গেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে অগ্নয়ে জাতবেদসে ইত্যাদ্যষ্টমূর্তিভ্যো নমঃ।

বহির্দেশে-
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ব্রাহ্ম্যাদ্যষ্টশক্তিভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে পদ্মাদ্যষ্টনিধিভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ইন্দ্রাদিলোকপালেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বজ্রাদ্যস্ত্রেভ্যো নমঃ।

স্রুক-স্রুব সংস্কার-
স্রুক ও স্রুব (যা দিয়ে আহুতি দেওয় হয়) অধোমুখে অগ্নিতে তপ্ত করে উহা বামহস্তে রেখে তার অগ্র, মধ্য ও মূলদেশ কুশ দিয়ে মার্জন ও জল দিয়ে প্রোক্ষণপূর্বক পুনরায় তপ্ত করে মার্জিত কুশ অগ্নিতে নিক্ষেপ করবে এবং নিজের দক্ষিণে কুশোপরি ঐ স্রুক ও স্রুব স্থাপন করবে।

ঘৃত-সংস্কার- কুশোপরি ঘৃতপাত্র স্থাপন ও ‘ফট্’ মন্ত্রে প্রোক্ষণ করে তাতে ঘৃত স্থাপন করবে। পরে বীজ (ওঁ ঐং) পাঠ করে ঐ ঘৃত বীক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে কুশ দ্বারা তাড়ন, ‘হূঁ’ মন্ত্রে প্রোক্ষণ, ‘ফট্’ মন্ত্রে ঊর্ধ্বোর্ধ্ব তালত্রয়ে রক্ষণ ও ‘বং’ মন্ত্রে যোনিমুদ্রা প্রদর্শন করবে। পরে ঘৃত অগ্নিতে গলিয়ে দু’টি কুশ জ্বালিয়ে ‘হূঁ’ মন্ত্রে তার ওপর ঘুরিয়ে অগ্নিতে নিক্ষেপ করবে। অনন্তর এক বিঘৎ (অর্ধহস্ত) পরিমিত দু’টি কুশ ঘৃতোপরি রেখে ঘৃতকে তিনভাগ করবে। বাম ভাগের ঘৃতকে ইড়া, মধ্য ভাগকে সুষুম্না ও দক্ষিণ ভাগকে পিঙ্গলারূপ ভাবনা করে হোম করবে।

আহুতি-প্রদান- ‘নমঃ’ মন্ত্রে দক্ষিণ ভাগ থেকে ঘৃত নিয়ে (১) ‘ওঁ অগ্নয়ে স্বাহা’ মন্ত্রে অগ্নির দক্ষিণনেত্রে ( যে স্থানে অগ্নি অল্পমাত্র জ্বলছে) আহুতি দিবে ও দক্ষিণভাগে রক্ষিত কোন পাত্রে হুতশেষ রাখবে।
পরে ‘নমঃ’ মন্ত্রে বামভাগ থেকে ঘৃত নিয়ে (২) ‘ওঁ সোমায় স্বাহা’ মন্ত্রে অগ্নির বামনেত্রে আহুতি দিবে ও হুতশেষ পূর্বোক্ত পাত্রে রাখবে। হুতশেষ প্রতিবারই রাখবে।
এবার ‘নমঃ’ মন্ত্রে মধ্যভাগ থেকে ঘৃত নিয়ে (৩) ‘ওঁ অগ্নীষোমাভ্যাং স্বাহা’ মন্ত্রে অগ্নির ললাটনেত্রে আহুতি দিবে।
পুনরায় দক্ষিণ ভাগ থেকে ‘নমঃ’ মন্ত্রে ঘৃত নিয়ে (৪) ‘ওঁ অগ্নয়ে স্বিষ্টিকৃতে স্বাহা’ মন্ত্রে অগ্নির মুখে (যে স্থানে অগ্নি অধিক জ্বলছে) আহুতি দিবে। প্রত্যেক আহুতির পর হুতশেষ রাখতে হয়।

মহাব্যাহৃতি হোম- ঘৃত দ্বারা এই চারটি মন্ত্রে আহুতি দিবে। (১) ওঁ ভূঃ স্বাহা, (২) ওঁ ভুবঃ স্বাহা, (৩) ওঁ স্বঃ স্বাহা, (৪) ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ স্বাহা।
তারপর ‘ওঁ বৈশ্বানর জাতবেদ ইহাবহ লোহিতাক্ষ সর্বকর্মাণি সাধয় স্বাহা’ মন্ত্রে তিনবার ঘৃতদ্বারা আহুতি দিবে।
অতঃপর বীজমন্ত্রের সহিত ‘স্বাহা’ পদ যোগ করে (ওঁ ঐং স্বাহা) ২৫ বার আহুতি দিবে এবং পরে আপনার সহিত অগ্নি ও দেবতার ঐক্য চিন্তা করে ঐ (ওঁ ঐং স্বাহা) মন্ত্রে ১১ বার আহুতি দিবে।

সঙ্কল্প- তাম্রপাত্রে ( কুশীতে ) মূল ও অগ্রভাগের সহিত তিনটি কুশ, তিল, তুলসী,  হরিতকী, গন্ধ, পুষ্প, আতপ চাল ও জল নিয়ে বীরাসনে (দক্ষিণ জানু পেতে ) পূর্বমুখী বসবে। বাম করতলে কুশী স্থাপন করে দক্ষিণ  করতল দ্বারা আচ্ছাদনপূর্বক পাঠ করবেঃ
বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য মাঘে মাসি মকর রাশিস্থে ভাস্করে শুক্লে পক্ষে পঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্মা ( পরার্থে- অমুকগোত্রস্য অমুকদেবশর্মণঃ ) [অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকঃ
(যজমানের গোত্র ও নাম)] সরস্বতী প্রীতিকামঃ সরস্বতীপূজাকর্মণি ‘ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ স্বাহা’ ইতি মন্ত্রেণ অষ্টোত্তরশত (বা অষ্টাবিংশতি) সংখ্যক-সাজ্যবিল্বপত্রৈঃ হোমমহং করিষ্যে (পরার্থে- করিষ্যামি )।
পরে হাতের পাত্রটি ঈশান কোণে উপুড় করে রেখে তার উপর নিম্নোক্ত মন্ত্রে আতপ চাল ছড়াবে এবং ঘণ্টা বাজাবে-
ওঁ যজ্জাগ্রতো দূরমুদৈতি দৈবং তদু সুপ্তস্য তথৈবৈতি।
দূরঙ্গমং জ্যোতিষাং জ্যোতিরেকং তন্মে মনঃ শিবসঙ্কল্পমস্তু।
অতঃপর হবনীয় বিল্বপত্রে যথাযথভাবে অভ্যুক্ষণ ও অর্চনা করে পূর্বোক্ত ‘ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ স্বাহা’ মন্ত্রে মৃগমুদ্রায় এক একটি সাজ্যবিল্বপত্র গ্রহণ করে আহুতি প্রদান করবে।
তারপর (১) ‘ওঁ ঐং সরস্বতীদেব্যা অঙ্গদেবতাভ্যঃ স্বাহা’, (২) ‘ওঁ ঐং সরস্বতীদেব্যা আবরণদেবতাভ্যঃ স্বাহা’ মন্ত্রে এক একটি আহুতি দিবে। অতঃপর অন্যান্য (গুরু-গণেশাদি) পূজিত দেবতার প্রত্যেককে এক একটি আহুতি প্রদান করবে।

পূর্ণাহুতি- পান ও কলা (বা কোন বিহিত ফল) সহ ঘৃতপূর্ণ পাত্র (স্রুব) হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে নিম্নোক্ত মন্ত্রে পূর্ণাহুতি দিবে- ‘ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ স্বাহা, ওঁ ইতঃপূর্বং প্রাণবুদ্ধিদেহধর্মাধিকারতো জাগ্রৎস্বপ্নসুষুপ্ত্যবস্থাসু মনসা বাচা কর্মণা হস্তাভ্যাং পদ্ভ্যামুদরেণ শিশ্না যৎকৃতং যদুক্তং যৎস্মৃতং তৎসর্বং ব্রহ্মার্পণং ভবতু স্বাহা, মাং মদীয়ঞ্চ সকলং সরস্বতীচরণে সমর্পয়ে’ বলে পাত্রের সকল ঘৃত প্রভৃতি অগ্নিতে দিয়ে মন্ত্র পাঠ করবে-
ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।। হরিঃ ওঁ তৎসৎ।

অগ্নিবিসর্জন- সংহারমুদ্রায় দেবতাকে অগ্নি থেকে নিজ হৃদয়ে এনে ‘ক্ষমস্ব’ মন্ত্রে অগ্নি বিসর্জন করবে এবং ‘ওঁ অগ্নে ত্বং সমুদ্রং গচ্ছ’ মন্ত্রে অগ্নিকে দক্ষিণদিকে চালিত করবে। পরে ‘ওঁ পৃথ্বি ত্বং শীতলা ভব’ মন্ত্রে অগ্নির ঈশান কোণে দধি বা দুগ্ধ (তদভাবে জল) নিক্ষেপ করে অগ্নি নির্বাপিত করবে।

পূর্ণপাত্র উৎসর্গ- ‘বং এতস্মৈ পূর্ণপাত্রায় (অথবা পূর্ণপাত্রানুকল্পায় ভোজ্যায়) নমঃ, ওঁ এতদধিপতয়ে দেবায় শ্রীবিষ্ণবে নমঃ, ওঁ এতৎসম্প্রদানায় ওঁ ব্রহ্মণে নমঃ’ এইরূপে যথাবিধি অর্চনা করে নিম্নোক্ত মন্ত্রে উৎসর্গ করবে-
 বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য মাঘে মাসি মকর রাশিস্থে ভাস্করে শুক্লে পক্ষে পঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্মা (পরার্থে- অমুকগোত্রস্য অমুকদেবশর্মণঃ) [অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকঃ (যজমানের গোত্র ও নাম ) ] কৃতৈতৎ সরস্বতীপূজাঙ্গীভূতহোমকর্মণঃ সাঙ্গতার্থং ব্রহ্মদক্ষিণামিদং পূর্ণপাত্রং (অথবা পূর্ণপাত্রানুকল্পং ভোজ্যং) তস্মৈ ব্রহ্মণেহহং সম্প্রদদে (অপরের জন্য হলে- সম্প্রদদানি) বলে জলবিন্দু প্রক্ষেপ করে উৎসর্গ করবে। এই্ সময়ে নিম্নোক্ত মন্ত্রে দেবতার উদ্দেশে দক্ষিণা দান করতে হবে।
 দক্ষিণা- রজতখণ্ড বা স্বর্ণখণ্ড বা মুদ্রা (বা হরীতকী বা পুষ্প) কোন পাত্রে রেখে অর্চনা করবে। ‘বং এতস্মৈ কাঞ্চনমূল্যায় (রজতখণ্ডায় বা মুদ্রকায়) নমঃ’ মন্ত্রে তিনবার অর্ঘ্যজলে প্রোক্ষণ (চিৎ হস্তে জলের ছিটা) করবে। ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে বং এতস্মৈ কাঞ্চনমূল্যায় (রজতখণ্ডায়) নমঃ’, মন্ত্রে দক্ষিণাদ্রব্যের উপর গন্ধপুষ্প অর্পণ করবে। নিম্নোক্ত মন্ত্রে আবার গন্ধপুষ্পে পূজা করবে-
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় শ্রীবিষ্ণবে নমঃ, ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতৎসম্প্রদানায় ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ। তারপর-
বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য মাঘে মাসি মকর রাশিস্থে ভাস্করে শুক্লে পক্ষে পঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্মা ( পরার্থে- অমুকগোত্রস্য অমুকদেবশর্মণঃ ) [অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকঃ ( যজমানের গোত্র ও নাম ) ] সরস্বতী প্রীতিকামনায়া কৃতৈতৎ সরস্বতীপূজাকর্মণঃ সাঙ্গতার্থং দক্ষিণামিদং কাঞ্চনমূল্যং (রজতখণ্ডমর্চিতং) শ্রীবিষ্ণুদৈবতং সরস্বত্যৈ অহং সম্প্রদদে (অপরের জন্য হলে- সম্প্রদদানি) বলে অর্ঘ্যজলবিন্দু প্রক্ষেপ দ্বারা নিবেদনপূর্বক দেবতার উদ্দেশে প্রদান করবে। অতঃপর অচ্ছিদ্রাবধারণ ও বৈগুণ্য সমাধান করবে।

অচ্ছিদ্রাবধারণ ও বৈগুণ্য সমাধান- প্রথমে করজোড়ে বলবে- ‘ওঁ কৃতৈতৎসরস্বতীপূজাকর্মাচ্ছিদ্রমস্তু’। পরে দক্ষিণ হস্তে জল গণ্ডুষ নিয়ে বলবে- ‘ওঁ তৎসদদ্য মাঘে মাসি মকর রাশিস্থে ভাস্করে শুক্লে পক্ষে পঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্মা ( পরার্থে- অমুকগোত্রস্য অমুকদেবশর্মণঃ ) [অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকঃ ( যজমানের গোত্র ও নাম ) ] কৃতেহস্মিন্ কর্মণি যদ্বৈগুণ্যং জাতং তদ্দোষপ্রশমনায় শ্রীবিষ্ণুস্মরণমহং করিষ্যে’ এবং ঐ জল সম্মুখস্থ জলপাত্রে ফেলবে। অনন্তর পাঠ করবে- ‘ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্। পাঠান্তে ‘ওঁ বিষ্ণুঃ’ এই মন্ত্র ১০ বার জপ করবে। করজোড়ে পাঠ করবে-
‘ওঁ প্রীয়তাং পুণ্ডরীকাক্ষঃ সর্বযজ্ঞেশ্বরো হরিঃ।
তস্মিংস্তুষ্টে জগত্তুষ্টং প্রীণিতে প্রীণিতং জগৎ’।
তারপরে হাতে এক গণ্ডুষ জল নিয়ে- ‘ওঁ এতৎ কর্ম শ্রীরামকৃষ্ণার্পণমস্তু’ মন্ত্রে দেবতার উদ্দেশে ত্যাগ করবে।
 পরে দেবতাকে প্রণাম করবে এবং স্রুবলগ্ন ভস্ম দ্বারা তিলক করবে।
মন্ত্র- ‘হ্রীং ক্লীং সর্বশান্তিকরো ভব’।

ক্ষমাপ্রার্থনা-
করজোড়ে বলবে-
ওঁ বিধিহীনং ক্রিয়াহীনং মন্ত্রহীনং যদর্চিতং
ময়া নিবেদিতং ভক্ত্যা পরিপূর্ণং তদস্তু মে।
কর্মণা মনসা বাচা ত্বত্তো নান্যো গতির্মম
অন্তশ্চারেণ ভূতানাং দ্র্রষ্টা ত্বং পরমেশ্বর।।
অতঃপর নিম্নোক্ত মন্ত্রে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে আত্মসমর্পণকরতঃ চরণামৃত পান করে প্রসাদ ধারণ করবে।
ওঁ জয় জয় দেবি চরাচরসারে কুচযুগশোভিতমুক্তাহারে
বীণারঞ্জিত পুস্তকহস্তে ভগবতি ভারতি দেবি নমোহস্তুতে।।
ওঁ সরস্বতি মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোহস্তুতে।।
[যাঁরা পুষ্পাঞ্জলি দিতে ইচ্ছুক এ পর্যায়ে তাঁরা পূর্বোক্ত রীতিতে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে প্রণাম করবে। পরে দেবীকে বিশ্রাম দিবে। বিকালে বৈকালীন দিতে হবে। সন্ধ্যায় সন্ধ্যারতি, রাত্রিকালীনভোগ ও শয়ন দিতে হবে।]

পরবর্তীদিনের কর্ম
পরদিন সকালে সামান্যবিধি অনুসারে (নৈবেদ্য দিয়েও করা ভাল) পঞ্চদেবতার পূজা ও বিশেষার্ঘ্য স্থাপন করে দশোপচারে পূজা করে দইকড়মাদি (দধি, চিড়া ইত্যাদি) দ্রব্য নিবেদন করবে। যথা:- ‘বং এতস্মৈ দধিকরম্ভায় নমঃ’ মন্ত্রে তিনবার প্রোক্ষণ ইত্যাদিরূপে (নৈবেদ্য নিবেদন রীতি অনুযায়ী) অর্চনা ও নিবেদন করবে। পরে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে আরতি করবে ও দেবতার শরীরে সকল আবরণ দেবতা বিলীন চিন্তা করে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে স্তব পাঠ করে শঙ্খজল নিয়ে মন্ত্রপাঠ ও ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে দেবতাকে একবার বা তিনবার প্রদক্ষিণ করবে। পরে আত্মসমর্পন করবে।

আত্মসমর্পন- আসনে বসে হাতে জল নিয়ে বলবে- ‘ওঁ ইতঃপূর্বং প্রাণবুদ্ধিদেহধর্মাধিকারতো জাগ্রৎস্বপ্নসুষুপ্ত্যবস্থাসু মনসা বাচা কর্মণা হস্তাভ্যাং পদ্ভ্যামুদরেণ শিশ্না যৎকৃতং যদুক্তং যৎস্মৃতং তৎসর্বং ব্রহ্মার্পণং ভবতু স্বাহা, মাং মদীয়ঞ্চ সকলং শ্রীসরস্বতী-দেবতায়ৈ সমর্পয়ে (পরার্থে- সমর্পয়ামি)।’ বলে দেবতার উদ্দেশে দিয়ে মন্ত্র পাঠ করবে-
                             ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।। হরিঃ ওঁ তৎসৎ’।

বিসর্জন- ‘ওঁ সরস্বতি দেবি ক্ষমস্ব’ মন্ত্রে ঘটে অর্ঘ্যজল দিয়ে ঘট ও প্রতিমা সঞ্চালন করবে। সংহারমুদ্রায় ঘট থেকে নির্মাল্যপুষ্প নিয়ে তা আঘ্রাণ করে দেবতা হৃদয়ে প্রবেশ করলেন মনে করবে ও  হস্ত প্রক্ষালন করে করজোড়ে পাঠ করবে-
ওঁ উত্তরে শিখরে দেবি ভূম্যাং পর্বতমূর্ধনি ।
ব্রহ্মযোনিসমুৎপন্নে গচ্ছ দেবি মমান্তরম্।।
ওঁ গচ্ছ গচ্ছ পরং স্থানং স্বস্থানং পরমেশ্বরি।
সংবৎসরব্যতীতে তু পুনরাগমনায় চ।।
অতঃপর ঈশানকোণে ত্রিকোণ মণ্ডল করে তদুপরি ‘ওঁ নির্মাল্যবাসিন্যৈ নমঃ’ মন্ত্রে কিঞ্চিৎ নির্মাল্য রাখবে। সবশেষে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করবে।

শান্তিজল- পুরোহিত পঞ্চপল্লব বা কুশ দিয়ে শান্তিমন্ত্র পাঠ করে শান্তি জল দিবেন-
ওঁ ঋচং বাচং প্রপদ্যে মনো যজুঃ
প্রপদ্যে সামপ্রাণং প্রপদ্যে চক্ষুঃ শ্রোত্রং প্রপদ্যে।
বাগৌজঃ সহৌজ ময়ি, প্রাণাপানৌ ।। ১
ওঁ যন্মে ছিদ্রং চক্ষুষোঃ হৃদয়স্য ব্যতিতৃণ্নং,
বৃহস্পতির্মেতদ্দধাতু শংনো ভবতু ভূবনস্য যস্পতিঃ ।। ২
ওঁ স্বন্তি ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ ।
স্বস্তি নস্তার্ক্ষো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতির্দধাতু।
ওঁ দৌঃ শান্তিঃ অন্তরীক্ষং শান্তিঃ পৃথিবী শান্তিঃ
আপঃ শান্তিরোষধয়ঃ শান্তিঃ। বনস্পতয়ঃ শান্তির্বিশ্বে দেবাঃ
শান্তির্ব্রহ্ম শান্তিঃ সর্বং শান্তিঃ শান্তিরেব শান্তিঃ
সামা শান্তিরেধি।। ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।। ৩

সমাপ্ত





















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন